RSS

Saturday, November 20, 2010

জমানো কাঁধ এবং করণীয়

কাঁধে যখন সবসময় ব্যথা হয় এবং রোগী নিজে নিজের বা চিকিৎসক রোগীর কাঁধের বিভিন্ন নড়াচড়া করাতে পারে না তখন একে ফ্রোজেন শোল্ডার (ঋৎড়ুবহ ঝযড়ঁষফবৎ) বা জমানো কাঁধ বলে। ফ্রোজেন শোল্ডার একটি সেল্ফ লিমিটিং রোগ অর্থাৎ এটা আপনা আপনি ভালো হয়; তবে পাঁচ মাস থেকে তিন বৎসর সময় লাগে ভালো হতে। এই সময়ে যথোপোযুক্ত চিকিৎসা এবং ব্যায়াম না হলে জয়েন্ট চিরস্থায়িভাবে স্টিফ বা জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

এই রোগে জয়েন্টের পর্দা বা ক্যাপসুলে প্রদাহ, সংকোচন ও স্কার টিসু্য হয়। জয়েন্ট সার্ফেসগুলির মধ্যে এবং ক্যাপসুল ও ক্যাপসুলের বাহিরের টিসু্যর মধ্যে এডহেসন তৈরী হয়। এজন্য কাঁধ স্টিফ বা শক্ত হয় বা জমে যায়। আবার জোড়ার ফ্লুইড বা পানি শুকিয়ে যাওয়ার জন্যও জয়েন্ট স্টিফ হয় এবং মুভমেন্ট সীমিত হয়।

ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধ রোগী তিনটি অবস্থার মধ্য দিয়ে রোগকাল অতিক্রম করে। প্রথম অবস্থা বা ব্যথা অবস্থায়, শোল্ডার জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং মুভমেন্ট সীমিত হয়। এই অবস্থা সাধারনত ৬-১২ সপ্তাহ থাকে। মধ্য অবস্থা বা স্টিফ অবস্থায়, কাঁধ শক্ত বা স্টিফ হয় বা জমে যায়। ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কম। স্টিফ বা জমানো অবস্থা ৪ - ৬ মাস থাকে। শেষ অবস্থা বা রিকভারী অবস্থায়, স্টিফনেস আস্তে আস্তে কমে আসে এবং ব্যথা কমে যায়। এক বৎসরের অধিক সময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকে ।

এই রোগের ঝূকিপূর্ণ কারা?

১. ৪০ থেকে ৬০ বৎসর বয়সের মানুষ এ রোগে ভুগে।

২. পুরুষের তুলনায় মহিলারা দুইগুন বেশী ভুগে।

১.ডায়াবেটিক ও থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীরদের জমানো কাঁধ বেশী হয়।

২. হূদরোগ, ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক, পারকিনসোনিসম ও আর্থ্রাইটিস রোগীদের জমানো কাঁধ হয়।

৩. মাথায় ও কাঁধে অপারেশন হলে।

৪. কাঁধে আঘাত পেয়ে দীর্ঘ দিন নড়াচড়া না করলে জমানো কাঁধ হতে পারে।

৫. বার্সাইটিস, টেনডোনাইটিস এবং রোটাটর পেশীর প্যাথলজি (টিয়ার, টেনডোনাইটিস, ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন)

৬. ইমপিনজ্মেন্ট সিনড্রোম জমানো কাঁধ করে।

রোগের লক্ষণ সমূহ:

১. সব সময় কাঁধে ব্যথা থাকে-রাতে বেশী হয় এবং শীতকালে ব্যথা বেড়ে যায় ।

২. কাঁধ বা বাহুর মুভমেন্ট সবদিকে সীমিত হয়।

৩. হাত দিয়ে কোন কিছু তোলা বা হাত উপরে উঠানো যায় না।

৪. চুল আচঁড়ানো যায় না।

৫. জামা পরিধান বা বুতাম লাগানো কষ্টকর।

৬. জমানো কাঁধে কাত হয়ে ঘুমানো যায় না ব্যথার জন্য।

৭. পেন্টের পিছনের পকেটে হাত দেওয়া যায় না ।

চিকিৎসা :

ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধের প্রধান চিকিৎসা হলো ব্যায়াম । তবে রোগীকে পরীক্ষা, এক্স-রে,আলট্রাসনোগ্রাফী করে এর কারণ বের করতে হবে এবং যথোপোযুক্ত চিকিৎসা প্রধান করতে হবে। চিকিৎসা শুরু করলে প্রায় তিন মাস সময় লাগে ভালো হতে।

১. ক্যাপসুল ও সফ্ট টিসুর স্ট্রেসিং ব্যায়াম।

২. পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

৩. ব্যথার ওষুধ সেবন করা।

৪.ফিজিক্যাল থেরাপি যেমন- এস.ডবিস্নও.ডি, ইউ.এস.টি, টি.ই.এন.এস।

৫. গরম /ঠান্ডা সেঁক ।

৬. ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্টেরয়েড ইনজেকশন।

৭. ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্যালাইন থেরাপি ।

উপরোক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধ ভালো না হলে নিম্নের সার্জিক্যাল পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে-

১. রোগীকে এ্যানেসথেসিয়া দিয়ে কাঁধের মুভমেন্ট করাতে হবে।

২. ছোট ছিদ্র দিয়ে কাধেঁ আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে ডেব্রাইডমেন্ট ও ক্যাপসুলার রিলিজ করলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

ডা: জি,এম, জাহাঙ্গীর হোসেন

কনসালটেন্ট-হাঁড় , জোড়া, ট্রমা ও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারী

ডিজিল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস

মিরপুর ঢাকা

0 comments:

Post a Comment