RSS

Wednesday, October 13, 2010

ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন

সারা দিন কাজের পর ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর ও মন। ক্লান্তিহীন থাকার জন্য সচেতন থাকতে হবে সব সময়—সেটা হোক শীত বা গরম কাল। তাই মন ও শরীর ভালো রাখার জন্য থাকতে হবে বাড়তি সচেতনতা। দিনের শুরুতে বা সারা দিন কাজের শেষে অবসর সময়টুকু কাজে লাগাতে পারেন।

চাকরিজীবী রাসেল আহমেদ নিয়ম করে হাঁটতে বের হন। সকালে ধানমন্ডি লেকের পাড় দিয়ে প্রতিদিন হাঁটেন। তিনি জানান, শরীর ঠিক রাখতে হলে হাঁটহাঁটি বা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। গ্রুপ ফিটনেস জিমে কর্মরত ফাহমিদা হক বলেন, শরীরকে ঠিক রাখার জন্য ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্যও ব্যায়াম সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই জিমে অথবা ঘরে বসে শরীরচর্চা করে থাকে। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রজীবন শরীর গঠন করার উপযুক্ত সময়। এখন যদি শরীরটাকে ঠিক রাখতে পারি, পরবর্তীকালে রোগবালাইয়ের খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের এই বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রাণশক্তি অনেক বেশি। তাই যখন অবসর পাই, তখন শরীরটাকে ঠিক রাখার চেষ্টা করি। এর ফলে পড়ালেখায় মনও বসাতে পারছি ভালো। তাই পরীক্ষার ফলও আগের চেয়ে অনেক ভালো হচ্ছে। বছরের যেকোনো সময়ই হোক না কেন, শরীরচর্চার জন্য বাড়তি সচেতন থাকতে হবে। ঘরে-বাইরে যেখানেই হোক না কেন, ব্যায়াম করার জন্য খাবার, পোশাক ও সময়—সবকিছুর ওপরই বাড়তি চিন্তা রাখতে হবে।’

রকমারি ব্যায়াম
সাধারণত দুই ধরনের ব্যায়াম সবার কাছে জনপ্রিয়। ১. ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ২. ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ। যাঁদের বয়স তুলনামূলক বেশি, তাঁরা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে থাকেন। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ হলো—দৌড়, হাঁটা, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। এতে বাড়তি কোন যন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়না। ঘরে সবে সহজেই এমন অনেক ব্যায়াম করা যায়। তাই এটি বেশ জনপ্রিয়। ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা বেশি করে থাকে। এর মধ্যে নানারকম যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন ডাম্বেল, বার্বেল, ট্রেডমিল, রোয়িং মেশিন ইত্যাদি। তবে ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যায়ামের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। এ ধরনের ভারী ব্যায়াম করার আগে মাস তিনেক ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরটাকে গঠন করে নেওয়া দরকার। ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ করার দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী আছে এমন শরীরচর্চাকেন্দ্রে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের দেহের ভেতর লিভার, ফুসফুস, পাকস্থলী, হূৎপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে। তাই এলোপাতাড়ি ব্যায়াম করে শরীর ঠিক রাখতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, ব্যায়াম শুরু করার আগে ভালো কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

খাবার
শরীর ঠিক রাখতে হলে সারা বছরই ব্যায়াম করতে হবে । শুধু ব্যায়াম করে বসে থাকলেই হবে না। বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান আখতারুন নাহার বলেন, ব্যায়াম করলে শরীরের অনেক শক্তি খরচ হয়। ব্যায়ামের ফলে খরচ হওয়া শক্তি পূরণ করতে হলে খেতে হবে বাড়তি খাবার। শুধু খাবার খেলেই হবে না। খেতে হবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার। সে খাবার যেন পূরণ করতে পারে ব্যায়ামের ফলে খরচ হওয়া প্রাণশক্তি। হোক সেটা জিমনেশিয়ামে অথবা পার্কে। বয়সের ভিন্নতার কারণে খাবারেরও পার্থক্য থাকতে হবে। কত সময় শরীরচর্চা করবেন, এর ওপর খাবার নির্ভর করবে। সব ঋতুতেই ব্যায়াম করা উচিত। ঋতু ভেদে খাদ্যাভ্যাসের কিছুটা পরিবর্তন করতে পারেন। শীতে শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ব্যায়াম করার পর রুটি, ডিম (কুসুম বাদে) এবং সবজি খেতে পারেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মিষ্টি আলু, লালশাক ইত্যাদি সবজি খেলে ভালো হয়। গরমের সময়ও পানি বেশি করে খেতে হবে। একটু ভারী খাবারে মধ্যে আপনি রাখতে পারেন দেশীয় ফল, দুধ (সর বাদে)। শীত বা গরম হোক, শরীরচর্চার সময় একটা দিকে সবচেয়ে বেশি লক্ষ রাখতে হবে, সেটা হলো, পানির অভাব যেন আপনার শরীরে দেখা না দেয়। এ জন্য ব্যায়াম করার পর বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

কখন ও কত সময়
নিয়ম জেনে সময় মেপে শরীরচর্চা করতে হবে। আপনি যদি প্রথম প্রথম ব্যায়াম শুরু করেন, তবে কিছুটা কম সময় নিয়ে করুন। আর যদি অনেক দিন থেকে ব্যায়াম করেন, তবে আপনি বেশি সময় নিয়ে করতে পারেন। আপনার সারা দিনের ব্যস্ততার ওপর নির্ভর করবে আপনি কোন সময় ব্যায়াম করবেন। গরমের সময় যেহেতু শরীর বেশি ঘামে, তাই সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি বাইরে ব্যায়াম করতে চান, তবে গরমের সময় সূর্য ওঠার পরপরই খুব সকালে যখন পরিবেশ ঠান্ডা থাকে, তখন ব্যায়াম করা উচিত। অথবা সূর্য ডুবে যাওয়ার ঠিক আগের সময়টায় শরীরচর্চা করতে পারেন।
শীতের সময় সকালে অনেকেই ঘুম থেকে একটু বেলা করে ওঠেন। সকালে বাইরে যদি শীত বেশি থাকে, তবে অন্য সময়ও ব্যায়াম করতে পারেন। তবে বছরের যে সময়ই হোক না কেন, যখন হাতে সময় থাকে, তখনই উপযুক্ত সময়। সে ক্ষেত্রে সকাল-বিকেল কোনো সমস্যা নয়। আর যদি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারেন, তবে সকালেই করে ফেলুন শরীরচর্চার অংশটুকু। যদি অবসর জীবন যাপন করেন, তবে বিকেলটাই বেছে নিন হাঁটাহাঁটির জন্য। বিকেলে পার্কের শীতল হাওয়ায় হাঁটতে পারেন যেকোনো বয়সের লোক। তবে সময়ের দিকে আপনাকে নজর রাখতে হবে। সময় যেন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে থাকে।

পোশাক
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে পোশাক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গরমের সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে শরীর তুলনামূলক বেশি ঘামে। শরীরচর্চা করলে শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঘামে। তাই ব্যায়ামের সময় পরতে আরাম লাগে এ রকম পোশাক পরার চেষ্টা করুন। সে ক্ষেত্রে সুতি হালকা পোশাক সবচেয়ে বেশি ভালো। খাটো হাতা, খোলামেলা, শরীরের মধ্যে বাতাস প্রবেশ করতে পারে এ রকম পোশাক পরে ব্যায়াম করলে ভালো হয়। পার্কে অথবা জিমে যেখানেই হোক, লক্ষ রাখতে হবে, ব্যায়াম করা সময় এমন পোশাক পরবেন না, যাতে অস্বস্তি অনুভব হয়।

কিছু নিয়মকানুন
বয়স ও শরীরের ওপর ভিত্তি করে সবার জন্য ব্যায়ামের আগে পরে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ফিটনেস ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার ও প্রশিক্ষক এস আর মানিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ব্যায়াম করার আগে ও পরে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। উল্লেখযোগ্যগুলো দেওয়া হলো—
 আলো-বাতাস আসতে পারে এ রকম ঘর বেছে নেওয়া উচিত ব্যায়াম করা জন্য।
 ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ করে শরীর গরম করে নিন।
 শুরুতে বেশ কিছুক্ষণ আগে হালকা কিছু খান, যাতে শর্করা থাকে, সে সঙ্গে আধা গ্লাস পানি।
 দেহে ছন্দ আনার জন্য ব্যায়ামের সময় গান শুনতে পারেন।
 ব্যায়ামের সময় নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন, মুখ দিয়ে নয়।
 ব্যায়ামের মধ্যবর্তী বিরতির সময় যেন খুব বেশি না হয়।
 একবারে সব ব্যায়াম না করে ধারাবাহিকভাবে একটি একটি করে ব্যায়াম শেষ করুন।
 ব্যায়াম চলাকালীন কোনো খাবার বা পানি না খাওয়াই ভালো।
 ব্যায়াম শেষে শরীর শিথিল হওয়ার সময় নিন।
 ব্যায়ামের পর গোসল করে নেওয়া ভালো।
 ব্যায়ামের পরপরই পানি খাবেন না।
খাবারের তিন ঘণ্টা আগে ও পরে ব্যায়াম করুন।
 ব্যায়ামের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন—বেশি ক্ষুধা লাগা, খুব ঘুম পাওয়া, শরীর ব্যথা করা। এ কারণে ছেড়ে না দিয়ে প্রতিদিন চালিয়ে যান। একসময় এসব কেটে যাবে।
 ব্যায়ামের পর প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।
 খাদ্যতালিকায় চর্বিযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
শাকসবজি ও ফলমূলের ওপর জোর দিন এবং প্রচুর পানি পান করুন।
 দিনে বা রাতের যেকোনো একসময় অভ্যাস করে ব্যায়াম করুন।
 নতুন যেকোনো ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

0 comments:

Post a Comment