RSS

Tuesday, July 13, 2010

যোগব্যায়াম: শরীর ও মনের সৌন্দর্যে

সুন্দর মনের বসবাস সুস্থ দেহের মধ্যেই। মন বা শরীর যেটির সৌন্দর্যের কথাই বলি না কেন, দুটোই নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপর। বিশেষ করে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য সহজেই ধরে রাখা যায়। বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মন সজীব হয়। যখন আমাদের মন সতেজ থাকে, তখন এমনি এমনিই আমাদের শরীরও ভালো হয়ে যায়। তাই নিরোগ দেহের জন্য সব বয়সী মানুষই যোগব্যায়াম করতে পারে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি যোগব্যায়াম অনুষঙ্গ হিসেবে ভালো কাজে দেয়।

বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন বলেন, ‘বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান, শৈল্পিক জীবন অর্থাৎ সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট অফ লিভিংয়ের আলোকে দেখা যায়, আমাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, মেধার বিকাশ ও রোগ থেকে মুক্তির জন্য ইয়োগাচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি পাঁচ থেকে ৯৯ বছর বয়সী সব মানুষকে বয়স ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। যোগব্যায়াম করার ক্ষেত্রে তিনি কিছু বিষয় খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন।
 যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। তবে সন্ধ্যার দিকেও করা যেতে পারে।
 ব্যায়াম করার সময় পোশাক যেন ব্যায়ামোপযোগী হয়, তা খেয়াল রাখুন। একদম চাপা আবার খুব বেশি ঢিলেঢালা পোশাক নয়, বরং হালকা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন।
 কোমল বা নরম কাপড়ের ট্রাউজার এবং সুতি বা কোমল কাপড়ের ফতুয়া বা টি-শার্ট পরতে পারেন।
 ব্যায়াম করার সময় ব্রেসলেট, চুড়ি, আংটি, নূপুর, চেইন—এ ধরনের অলংকার খুলে নিলে আরাম বোধ করবেন।
 ছেলেদের চুল সামনে এলে ব্যায়ামের সময়টায় তা রাউন্ড ব্যান্ড দিয়ে আটকে নিতে পারেন। আর মেয়েরা চুলটা খোঁপা করে বা ওপরে উঠিয়ে বেঁধে নিন।
 যোগব্যায়াম করার সময় অন্য সব চিন্তা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কেবল ব্যায়ামের দিকেই মনোযোগ দিন।
 যোগব্যায়ামটা শুরু করুন খুব সহজ কোনো আসন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন আসলগুলো চর্চা করে ফেলুন।
 যোগব্যায়ামের সব আসনই যে আপনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হবে, তা নয়। যেটি করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে, সেটি বাদ দিন।
 যে স্থানটিতে যোগব্যায়াম করবেন সেটি যেন যথেষ্ট খোলামেলা হয় এবং পর্যাপ্ত আলোবাতাস থাকে।
 ব্যায়ামের ফলে কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখুন।
 সঠিক পদ্ধতিতে যোগব্যায়াম করুন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছে চর্চা করতে পারেন অথবা কোনো প্রশিক্ষকের দেওয়া পদ্ধতির ধারাগুলো খুব ভালোভাবে খেয়াল করে পরে নিজে নিজে চর্চা করুন।
আমাদের নকশার নিয়মিত পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজনে রইল যোগব্যায়ামের একটি আসন— ‘ত্রিকোণাসন’। এটি যোগব্যায়ামের খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনের মধ্যে একটি। এ আসনটির মাধ্যম আপনি কোমরের দুই পাশের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার দেহের সুন্দর একটি কাঠামো গঠনে সহায়ক এ আসনটি। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারাও এটি অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন ত্রিকোণাসনের সঠিক নিয়মটি। আপনি নিজে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন এ অভ্যাসটি।
 প্রথমে তাড়াসনে দাঁড়ান।
 আপনার ডান পা দেড় ফুট ডান দিকে ও বাঁ পা দেড় ফুট বাঁ-দিকে নিন।
 দুই হাত সোজা করে দুই পাশের কাঁধ সমান উঁচুতে তুলুন। খেয়াল রাখুন, আপনার হাতের তালু দুটো যেন নিচের দিকে একই সরলরেখায় থাকে।
 ডান পায়ের পাতা ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি এবং বাঁ পায়ের পাতা ৩০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি ডান দিকে ঘুরিয়ে নিন। এ সময় পায়ের পাতাটি যেন টানটান ও আঁটসাট থাকে।
 এবার নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শরীরটা কোমর থেকে ওপরের অংশে ধীরে ধীরে ডান দিকে বাঁকান এবং ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি বাম হাত সোজা টানটান করে কাঁধের সঙ্গে এক সরলরেখায় রাখুন। আপনার দৃষ্টি এ সময় বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে দিন।
 আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
 নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমরের ওপরের অংশ আগের মতো সোজা করুন ও ডান হাতটি তুলে পায়ের পাতা আগের মতো সোজা করুন। দুই হাত একই সরলরেখায় আনুন।
 এবার একইভাবে বাঁ-দিকে করুন ও এরপর ৩০ সেকেন্ড হাত-পা সোজা করে নড়াচড়া ছাড়া অসমান্তরালভাবে মাটিতে শুয়ে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। এটি হচ্ছে শবাসন। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে তিনবার করুন।

খেয়াল রাখুন
এই যোগব্যায়ামটি করার সময় আপনি আসনে গিয়ে যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকবেন, ঠিক একই সময় নিয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।

0 comments:

Post a Comment