RSS

Monday, October 10, 2011

সাজাই নতুন সংসার

বিয়ের পর নতুন সংসার। চারপাশের পরিবেশটাই অন্য রকম। সারা দিন অফিস, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব— সবকিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার স্বপ্নের সংসারটা সাজাতে খেতে হয় হিমশিম। কীভাবে সাজাবেন আপনার ছোট্ট শান্তিকুটিরের অন্দর, দুজনে মিলে কেনা পছন্দের আসবাবগুলো বসাবেন কীভাবে—কর্মজীবী সদ্য বিবাহিত দম্পতিরা সংসার সাজানোর শুরুতেই এসব নানা ভাবনার সম্মুখীন হন। হারিয়ে ফেলেন কূলকিনারা। পোহাতে হয় নানা ঝক্কিঝামেলা। ‘সংসারে মাত্র দুজন মানুষ। দেয়ালের রং থেকে শুরু করে আসবাবপত্র—সবকিছুতেই থাকা চাই নতুনত্বের ছোঁয়া।

সীমিত জায়গায় ছোট্ট সংসার ছিমছামভাবে সাজানোর দিকেই থাকে মূল লক্ষ্য। এ জন্য যতটা সম্ভব খোলামেলা রাখুন আপনার অন্দর। নতুন সংসারে যেসব আসবাবপত্র না হলেই নয়, কেবল সেগুলোই ব্যবহার করা উচিত। এতে স্বল্প জায়গা সত্ত্বেও মনের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন আপনি।’ বলছিলেন অন্দরসাজের প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রমিতি উপদেষ্টার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্থপতি মো. নাঈমুল হক। তাঁর মতে, দিনের সব ব্যস্ততা শেষে বাসায় গিয়ে নিজের শোবার-ঘরে গা এলিয়ে দেওয়া। তাতেই ধুয়েমুছে যায় ক্লান্তি। তাই এই ঘরের অন্দরসজ্জায় সব সময়ই যাতে একটা স্নিগ্ধ ভাব বজায় থাকে, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেয়ালের হালকা রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কম উজ্জ্বল বাতিতে আলোকিত করুন আপনার শোবার-ঘর। ব্যবহার করুন হালকা ও উজ্জ্বল রঙের পর্দা; ঘরের শোভা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। অযথা বেশি না কিনে খুব সীমিতসংখ্যক আসবাবপত্রের ব্যবহারেও সাজাতে পারেন আপনার শোবার-ঘর। এ ক্ষেত্রে নিচু বিছানা, সাইড টেবিল কিংবা অফিসের কাজ করার জন্য ছোট্ট একটা টেবিল রাখতে পারেন। ঘরে বক্সখাট থাকলে ড্রয়ারগুলোও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন আপনি। আলমারি, ওয়ার্ডরোব আলাদাভাবে না রেখে এমন আসবাব রাখুন যাতে একটিতেই সবকিছুর ব্যবস্থা হয়ে যায়। টেলিভিশনের জন্য আলাদা কোনো জায়গা নষ্ট না করে ওয়াল ফিটিং এলসিডি টিভি ব্যবহার করতে পারেন। অফিসের কাজের জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটারের প্রয়োজন হতে পারে; সে ক্ষেত্রে টিভিকার্ডের মাধ্যমে একই সঙ্গে টিভি ও কম্পিউটারের কাজটা দিব্যি চালিয়ে নিতে পারেন আপনি। ড্রেসিং-টেবিল আলাদাভাবে রাখতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বাথরুমের সঙ্গে ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা রাখলে। এতে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঝামেলাটা কম হয়। যদিও শোবার-ঘরে অতিথি আগমন খুব একটা ঘটে না, তবু আপনি চাইলে দুজনের বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। কিংবা শোবার-ঘরের সঙ্গে ব্যালকনি কিংবা টেরাস থাকলে নিজেদের একান্ত সময়গুলো সেখানে সুন্দরভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন। সিলিং থেকে ঝুলন্ত টবেও রাখতে পারেন আপনার পছন্দের গাছ। ব্যালকনিতে দুজনের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে বাসায় ফিরে হালকা আলোর নিচে গরম চা কিংবা কফি হাতে সারা দিনের আলাপচারিতা সেরে নেওয়া যায়। অবসরে গান শোনা কিংবা বই পড়ার জন্য রকিং-চেয়ারও রাখতে পারেন। অন্দরসজ্জা নিয়ে এমনটিই মনে করেন মো. নাইমুল হক।
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন-এর প্রধান গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘নতুন সংসার বলে অতিথি আসবেই। তাই বসার ঘরের সজ্জাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু জায়গা সীমিত, তাই খুব অল্প আসবাবপত্রেই সাজিয়ে ফেলুন বসার ঘরটি।’
আজকাল লো-হাইটের সোফার প্রচলন বেশ দেখা যায়। সঙ্গে লো-হাইটের টেবিল। আপনি চাইলে শতরঞ্জি বা বাহারি পাটি ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফ্লোর-ম্যাট্রেস ব্যবহার করতেও দেখা যায় অনেককে। বসার ঘরেও একটা ওয়াল ফিটিং এলসিডি টেলিভিশন রাখতে পারেন। ফলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছোটখাটো মুভি পার্টিও দিতে পারেন সহজেই। বসার ঘরের দেয়ালে পেইন্টিংসও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। কিংবা তৈরি করতে পারেন ‘ফিচার ওয়াল’। একটা দেয়াল একটু উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে তাতে স্পটলাইটের ব্যবস্থা করে টাঙিয়ে রাখুন প্রিয় মুহূর্তের ছবিগুলো। অন্দরের সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে ঘরময় ছড়িয়ে থাকবে ভালোবাসা।
যেহেতু ছোট সংসার, তাই রান্নাবান্নার কাজ নিজেরাই করে নেওয়া যায় সহজে। এ জন্য আলাদা কোনো রান্নাঘর না রেখে বসার ঘরের আরেক প্রান্তে চালিয়ে নিতে পারেন এ কাজ। কিচেন ক্যাবিনেট, কিচেন কাউন্টার, কিচেন সিংক, গ্যাসের চুলা—সবকিছুই থাকবে সেখানে।
ধোঁয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে ব্যবহার করতে পারেন কিচেন হুড। এ ছাড়া অন্যান্য সুবিধা তো থাকবেই। সময় বাঁচাতে ওভেন, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেশিন, ব্লেন্ডার, কফি মেকার, রাইস কুকার, ওয়াটার হিটারের মতো প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিকস সামগ্রীগুলো রেখে দিন সেখানে। তাতে রান্নার ঝামেলা কিছুটা হলেও কমে যাবে। আপনি চাইলে ঘরে বাড়তি কোনো খাবার-টেবিল না রেখে কিচেনের সঙ্গে কিচেন টপের ব্যবস্থা করে দুজন বসে খেতে পারবেন। ঘরে ছোটখাটো পার্টির কাজটাও সারতে পারবেন এর মাধ্যমে। এতে আপনার জায়গা কম লাগবে। এ ছাড়া প্রবেশপথে জুতা-স্যান্ডেল রাখার ছোট তাক রাখতে পারেন। এতে বসতের অন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকবে। বললেন গুলশান নাসরিন।
আপনি আপনার অন্দর যেভাবেই সাজান না কেন, তা যেন কোনোভাবেই আপনার স্বাচ্ছন্দ্যকে নষ্ট না করে, সে দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বেশি কিছু না করে খুব সাধারণভাবেই অসাধারণ সজ্জায় সজ্জিত হতে পারে আপনার অন্দরমহল। তাহলে নতুন জীবনের মতো আপনার বসতিও হয়ে উঠবে শান্তির নিবাস। আনন্দময়তায় ভরে উঠবে প্রতিটি ক্ষণ।

0 comments:

Post a Comment